
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যা মামলায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করা হলে শুনানি শেষে এই নির্দেশ দেন বিচারক। এর আগে গ্রেপ্তারের সময় আইভি প্রশ্ন তোলেন, কোন ষড়যন্ত্রের কারণে, কার স্বার্থে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো? তিনি প্রশাসনের কাছে জানতে চান।
আইভী বলেন, ‘আমি কি কোনো জুলুমবাজ? আমি কি হত্যা করেছি? আমি কি চাঁদাবাজি করেছি? নারায়ণগঞ্জ শহরে আমি কোনো দিন কোনো বিরোধী দলকে আঘাত করেছি—এমন রেকর্ড আছে? তাহলে কিসের জন্য, কোন ষড়যন্ত্রের কারণে, কার স্বার্থে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো? আমিও প্রশাসনের কাছে জানতে চাই। বর্তমান যারা সরকারে আছেন, তারা সাম্যের কথা বলেছেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপনারা আন্দোলন করেছেন, সরকারকে হটিয়ে নতুন সরকারে এসেছেন—তাহলে কী এই বৈষম্য? তাহলে সৎ রাজনীতি, সততার কী মূল্যায়ন? আমি তো বাড়িতেই ছিলাম, পালাইনি। তাহলে এভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করতে হলো কেন? সেই জবাব জনগণের কাছে চাই, জনগণই দিবে। ইনশাল্লাহ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় শহরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত সাবেক এই মেয়রের বাড়িতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের একটি দল অভিযান শুরু করে। খবর পেয়ে বাড়ির বাইরে অবস্থা নেয় এলাকাবাসী। পরে সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করে বাড়ির চারপাশে ঘিরে রাখে।
স্থানীয়রা জানায়, গত ৫ আগস্টের পর এই প্রথম বিপুলসংখ্যক পুলিশের একটি বহর সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়িতে আসে। এ সময় এলাকাবাসী পুলিশ আসার খবর পেয়ে বাড়ির চারপাশে অবস্থা নিতে শুরু করে। পরে আশপাশের মসজিদগুলো থেকে পুলিশ আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে শতশত মানুষ এসে বাড়ির আশপাশের কয়েকটি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। রাত দেড়টা পর্যন্ত দেওভোগ সড়কের বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি অবস্থান করতে দেখা গেছে।
এলাকাবাসী জানায়, সাবেক মেয়র আইভী স্থানীয়দের মধ্যে জনপ্রিয়। তাই স্থানীয়রা এই পুলিশি অভিযান প্রতিহত করতে সড়কে নেমেছেন।
গত বছরের ২০ জুলাই সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আদমজী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন পোশাকশ্রমিক মিনারুল ইসলাম। শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরদিন গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় ২৩ সেপ্টেম্বর নিহত মিনারুল ইসলামের ভাই নাজমুল হক বাদী হয়ে ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
মিনারুল ইসলামের নিহত হওয়ার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম খান বলেন, মিনারুল হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ ১২ নম্বর আসামি। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২৬ মে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।